ঢাকা , শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫ , ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
কোনো দলের প্রতি সেনাবাহিনীর আলাদা নজর নেই : সেনা সদর সর্দি-জ্বরে জর্জরিত দেশ আগামী নির্বাচন প্রতিটি নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত কিশোরগঞ্জ ভেঙে বাজিতপুরকে জেলায় রূপান্তরের দাবি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় অনুমোদনে চরম অনিয়ম আউটসোর্সিং খাতের নীতিমালা সংশোধনের দাবি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বদলে যাচ্ছে ট্রেনের সময় কার্যকর ১০ আগস্ট ফেনীতে হাসিনা-নিজাম হাজারীসহ ২২১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট মৌলভীবাজারে সেপটিক ট্যাংকে নেমে যুবকের মৃত্যু ঢামেকে ভুয়া চিকিৎসক সেজে রোগীর সঙ্গে প্রতারণায় আটক ২ ১০ দিনে বাসার দখল নিতে হবে সরকারি চাকরিজীবীদের থানায় ঢুকে ‘মব’ সৃষ্টি : তিনজন কারাগারে গণতন্ত্র চর্চা করলে সমাজের বৈষম্য হ্রাস পায়-উপদেষ্টা নওগাঁয় হত্যা মামলায় দু’জনের মৃত্যুদণ্ড ও ধর্ষণ মামলায় দু’জনের যাবজ্জীবন নওগাঁ সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে বিএসএফের পুশ ইন সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি ডেসটিনি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাণিজ্য-বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করবে : ঢাকা চেম্বার সার কারখানা চালু রাখতে বন্ধ করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবর্তন আসছে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনায়

১৬ বছরের লড়াই বাবার, ছেলে মুক্ত হলেও মুখটা দেখা হলো না

  • আপলোড সময় : ২৪-০১-২০২৫ ০২:২৯:৫২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-০১-২০২৫ ০২:২৯:৫২ অপরাহ্ন
১৬ বছরের লড়াই বাবার, ছেলে মুক্ত হলেও মুখটা দেখা হলো না
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নেংটিহারা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। স্থানীয় হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে বিডিআর বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) যোগ দেন। তার মা-বাবাও সেদিন স্বস্তির হাসি হেসেছিলেন। কিন্তু ছেলের চাকরিতে যোগ দেওয়ার ২৬ দিনের মাথায় ঢাকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রবিউলের বাবা-মায়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলার আসামি হন রবিউল। সেই মামলায় তার সাজা হয়। তবে তার বাবা আব্দুর রহমানের বিশ্বাস ছিল যেহেতু ছেলে নির্দোষ, সে একদিন মুক্তি পাবেই। জমি-জায়গা বিক্রি করে ছেলের মুক্তির জন্য আদালতের চক্কর কেটেছেন দীর্ঘ দিন। এক সময় ছেলের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
অবশেষে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় ২৫০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। ২৫০ জনের মধ্যে রবিউল ইসলামও রয়েছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার কারামুক্তি পেয়েছেন রবিউল। তাকে এক পলক দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন তার স্বজনরা। কিন্তু যে বাবা দীর্ঘ ১৬ বছর ছেলের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন তিনি আর নেই। গত ৩ মাস আগে মারা গেছেন। ছেলের জন্য লড়াই করলেও আদরের রবিউলকে শেষবারের মতো দেখে যেতে পারলেন না আব্দুর রহমান।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েকদিন পর সারাদেশে পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় বিস্ফোরক ও হত্যা মামলার নিরপরাধ বিডিআর জোয়ানদেন মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেন তাদের স্বজনেরা। রবিউলের বাবাও ছেলের মুক্তির জন্য অসুস্থ শরীর নিয়েও রাস্তায় নামেন। আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তার আশা পূরণ হলেও ছেলেকে আর দেখা হলো না।
পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রশিক্ষণ শেষ করে যোগ দেন পিলখানায় বিডিআর বর্তমানে বিজিবি সদর দপ্তরে। ২৬ দিনের মাথায় ঘটে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা। ওই ঘটনার পর থেকে কারাগারে রয়েছেন রবিউল। প্রথমে একটি মামলায় ৭ বছর সাজাভোগ করে বের হন। তার কিছুদিন পর বিস্ফোরক আইনের আরেকটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠান আদালত। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। আগামীকাল শুক্রবার সকালে বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে সাবেক এই বিডিআর জোয়ানের। তার বাড়ি ফেরার আনন্দে আত্মহারা পরিবার-আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকজন।
রবিউলের বড় ভাই শাহাজাহান আলী বলেন, দীর্ঘ আইনি লড়ায়ের পর বেলা সাড়ে ১১টায় আমার ভাই কারাবাস থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভাইকে কাছে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। চাকরি পাওয়ার পর বাবা ও মা খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই সব খুশি ম্লান হয়ে যায়। উপার্জন করে রবিউল পরিবারে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছিল সেটার উল্টো। রবিউল কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা খাওয়া খরচ দিতে হতো। কিছুদিন পর পর কাপড়-চোপড় দেওয়া, তার পিছনে খরচ করতে গিয়ে আমাদের প্রায় সব শেষ। আমার ভাইয়ের জীবনটা জেলেই কেটে গেল।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে আমার ভাইকে পুনরায় চাকরিতে পুনবর্হাল, একই সঙ্গে দীর্ঘদিন বিনা অপরাধে কারাগারে থাকা এবং তার পেছনে খরচ করতে গিয়ে তার পরিবার যে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
রবিউলের চাচা রেজাউল করিম বলেন, ছেলের জন্য নানা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে রবিউলের বাবা আব্দুর রহমান গত অক্টোবর মাসে মারা গেছেন। রবিউলের মা সালেহা খাতুন এখনও অসুস্থ, বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বাবা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতো।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য